সম্পদ ও দায় এর প্রকারভেদ আজকের ক্লাসের আলোচ্য বিষয়। “সম্পদ ও দায়ের প্রকারভেদ [ Assets and Liabilities ]” ক্লাসটি এইচএসসি’র ফাইন্যান্স ১ম পত্র (HSC Finance 1st Paper) এর সিলেবাসের অংশ। এইচএসসি’র ফাইন্যান্স ১ম পত্র (HSC Finance 1st Paper) বা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ফাইন্যান্স ১ম পত্র (Class 11-12 Finance 1st Paper)” এর “৪র্থ অধ্যায় (chapter 4)” এ পড়ানো হয়।
Table of Contents
সম্পদ ও দায় এর প্রকারভেদ
সম্পদ (Asset)
সম্পদ হলো সেইসকল বস্তু যেগুলো আপনি ব্যবহার করে বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে উপকৃত হবেন । ধরুন, টাকা হচ্ছে একধরনের সম্পদ যেটি দিয়ে আপনি বিভিন্ন বস্তু ক্রয় করতে পারবেন। আবার ধরুন আপনার একটি দোকান আছে সেখানে আপনি বিভিন্ন জিনিস বিক্রয় করেন তাহলে সেই দোকানটি ব্যবহার করে আপনি উপকৃত হচ্ছেন। তাহলে সেই দোকানটি আপনার জন্য একটি সম্পদ।আরো কিছু উদাহরণ সম্পদ এর হলোঃ
ইনভেন্টরি ( Inventory)
যেখানে দোকানের সামগ্রী গূলো জমা রাখা হয় ভবিষ্যতে বিক্রয় এর জন্য
পাওনা (Accounts Receivables)
আপনি যদি কারো কাছ থেকে টাকা পান
জায়গা, জমি ( Land, Property)
এগুলো আপনি পরবর্তীতে কাজে লাগাতে পারবেন যেমন জমিতে বিল্ডিং বানাতে পারবেন এবং দালান ভাড়া দিতে পারবেন।
বিভিন্ন যন্ত্রপাতি (Equipment and Supplies)
যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার দোকানের পণ্য ও মালামাল ঠিক করতে পারবেন অথবা সেইসকল পণ্য যেগুলো আপনি বিক্রি করতে পারবেন।
পেটেন্ট ও কপিরাইট ( Patent and Copyright)
বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি কিংবা লেখকরা এটি ব্যবহার করে যাতে করে কেউ তাদের প্রোডাক্ট কপি করে বাজারে বিক্রয় করতে না পারে
ইন্স্যুরেন্স (Insurance)
জীবন বীমা ব্যবহার করে আপনি ভবিষ্যতে ক্ষতির সম্মুখ হলে কোম্পানি আপনার ক্ষতিপূরণ দিবে।
প্রিপেইড ব্যয় ( Prepaid Expense)
প্রিপেইড এক্সপেন্স এর জন্য আপনি প্রথমে অর্থ প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে তার সুবিধা ভোগ করেন যেমন বীমা বা ইন্সুরেন্স বা আপনি যখন আপনার ফোনে মোবাইল রিচার্জ করেন।
উপরে আপনাদের যে সকল উদাহরণ গুলি দেয়া হয়েছিল সেগুলো সেগুলো হচ্ছে সম্পদের কিছু ধরন।
ব্যালেন্স শীট এর মধ্যে একটি কোম্পানির সম্পদ, দায় এবং স্টক হোল্ডার ইকুইটি কোন কোন সেক্টরে এবং কি পরিমাণে আছে সেটি দেখানো হয়।
ব্যালেন্স শিট খুব ভালো করে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন আপনার সম্পদের তালিকা চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এখানে সবগুলি সম্পদ কিন্তু সবগুলোর বিভিন্ন রকমের বৈশিষ্ট্য রয়েছে আমরা এগুলি সম্পর্কে ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত জানব। আপাতত আমরা সবগুলোকে যদি একসাথে দেখি তাহলে দেখবেন আপনাদের উপরে ছকে বর্ণনা করা যেসকল সম্পদের উদাহরণ গুলো ছিল সেগুলো এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন টাকা, একাউন্ট রিসিভেবল অর্থাৎ কোম্পানী কারো থেকে টাকা পাচ্ছে, সাপ্লাইজ অথবা বস্তু যেটি কোম্পানি ব্যবহার করছে, জমি, দালান, বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট অথবা যন্ত্রপাতি, এবং ইনটেনজিবল অ্যাসেট যেগুলি হচ্ছে পেটেন্ট অথবা কপিরাইট।
সম্পদ কে আবার ২ ভাগে দেখা যায়
বর্তমান সম্পদ
বর্তমান সম্পদ যেগুলো আপনি সর্বোচ্চ একবছরের মধ্যে টাকায় রূপান্তর করতে পারবেন।
ধরুন আপনি কি দোকান চালাচ্ছেন, তাহলে আপনার ইনভেন্টরি বা ওয়ারহাউসে আপনি আপনার পণ্য রাখেন। শিবের হাউসের পণ্য বিক্রি হতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ১ মাস কিংবা ২ মাস অথবা এর থেকে কম সময়। যেহেতু এক বছরের ভিতরে আপনার সকল পণ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এবং এর বিনিময়ে আপনি অর্থ পাচ্ছেন তাহলে ইনভেন্টরি হচ্ছে আপনার স্বল্পমেয়াদি সম্পদ।
উপরের ছবিটি লক্ষ্য করে দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন সেখানে বর্তমান সম্পদের কিছু উদাহরণ দেয়া রয়েছে যেমন টাকা, অ্যাকাউন্ট রিসিভেবল, ইনভেন্টরি,
স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ। আপনি এগুলো সবগুলি থেকে এক বছরের মধ্যে আপনার রিটার্ন কিংবা প্রফিট জেনারেট করতে পারবেন তাই এগুলি হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি সম্পদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
স্থায়ী সম্পদ
স্থায়ী সম্পদ যেগুলো থেকে একবছরের মধ্যে কোনো রকম রিটার্ন আশা করা হয় না।
যেমন গবেষনা খাতে আপনি টাকা দিলে সেখান থেকে রিটার্ন পেতে আপনার ১ বছরের থেকে বেশি সময় লাগবে। আরো কিছু উদাহরণ হিসেবে ভূমি, দালান, যানবাহন, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, দীরঘমেয়াদী ইনভেস্টমেন্ট।

দায়(Liability)
দায় হচ্ছে যখন আপনি কোনো কিছুর জন্য কারো কাছে দেনা কিংবা ঋণী হয়ে যাবেন।
ধরুন আপনি ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিলেন। তাহলে আপনি ব্যাংক কে প্রতি মাসে অথবা বছরে সুদ দিবেন। এভাবে আপনি ব্যাংক এর কাছে দায়বব্ধ হয়ে গেলেন। আরো কিছু দায় এর উদাহরণ হলো
অনর্জিত উপার্জন(Unearned Revenue)
যখন আপনি কাজ করার পূর্বেই টাকা পেয়ে যান। সেক্ষেত্রে আপনি দায়বদ্ধ হয়ে যান সামনের মানুষের কাছে। কারণ সে আপনাকে টাকা প্রদান করে দিয়েছে এবং এখন আপনাকে তার কাজটি করতে হবে
নোটস পেয়েবল (Notes Payable)
নোটস পেয়েবল হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী দায় যখন আপনি ব্যাংক কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে থাকে
অ্যাকাউন্টস পেয়েবল
একাউন্টস পেয়েবল হচ্ছে স্বল্প মেয়াদী দায়, যখন আপনি কোন ব্যক্তির কাছে দেনা হয়ে থাকেন। ধরুন আপনি কারো কাছ থেকে পণ্য ধারে ক্রয় করে পরবর্তীতে সেটা বিক্রয় করছেন তাহলে আপনি যার থেকে ধার নিয়েছেন তার কাছে আপনি ঋণী এবং এটি Accounts Payable.
ট্যাক্স পেয়েবল ( Tax Payable)
আপনাকে সরকারের কাছে কর প্রদান করতে হয় তাহলে আপনি সরকারের কাছে করের জন্য দায়বদ্ধ।
বণ্ডস পেয়েবল ( Bonds Payable)
সরকার কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝে মাঝে বন্ড বাজারে ছেড়ে থাকে যে বন্ড গুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের সুদ তাদের ক্রেতাদের প্রদান করতে হয়।
অর্জিত দায় ( Accrued Liability)
যখন আপনি কোন কিছু ব্যবহার করে ফেলেন এবং সেটি টাকা আপনার দেয়া বকেয়া রয়ে যায়। ধরুন আপনার বাসার ইলেকট্রিকের বিল। আপনি প্রথমে একমাস বিদ্যুৎ উপভোগ করে থাকেন এবং পরবর্তীতে মাস শেষে আপনাকে তার জন্য পে করতে হয়।
স্বল্পমেয়াদী ঋণ যেটি তাকে এক বছরের মধ্যে পূরণ করতে হবে, দীর্ঘমেয়াদী যার একটি অংশ তাকে এই বছর প্রদান করতে হবে, কমপেনসেশন এবং বেনিফিট বলতে তার কোম্পানিতে কাজ করা যেসকল কর্মীরা রয়েছে তাদের সেলারির পাশাপাশি তাদেরকে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও উল্লেখ করা হয়েছে উপরের বর্ণিত ছকের মতো বন্ডস পেয়েবল, ট্যাক্স পেয়েবল, নোটস পেয়েবল, এবং ডেফারড রেভিনিউ যেটি হচ্ছে অনর্জিত লাভের (Unearned Revenue) এর প্রতিশব্দ।
সম্পদের মতো দায় ও ২ টি ভাগে ভাগ করা যায়
বর্তমান দায়
একটি হচ্ছে বর্তমান দায় যেটি আপনাকে ১ বছরের মধ্যে পূরণ করতে হবে।
ধরুন আপনি আপনার বন্ধুর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার দিবেন এবং বললেন আমি তোমাকে এই টাকাটি দুই মাস অথবা তিন মাসের মধ্যে ফেরত দিব। এই যে এক বছরের কম সময়ে তাকে ফেরত দিতে হবে তাই এটি হচ্ছে আপনার বর্তমান দায়।
দীর্ঘ মেয়াদী
আরেকটি হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী দায় যেটি পে করতে আপনাকে ১ বছরের বেশি সময় দেওয়া হবে।
যেমন এই যে বিশ্বে দেশগুলো রয়েছে তারা যখন আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে তখন তাদেরকে এই ঋণের টাকা শোধ করতে এক বছরের থেকেও অধিক সময় দেয়া হয়ে থাকে তাই এটি হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী দায়।
সম্পদের মত আপনি যদি উপরে দায়ের যে তালিকা রয়েছে সেটি দেখেন তাহলে দেখবেন বর্তমান দায় এর কিছু উদাহরণ কিছু রয়েছে এবং বাকি যাই রয়েছে সব দীর্ঘমেয়াদী দায়ের অন্তর্ভুক্ত।
সম্পদ ও দায় এর প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত ঃ
Read More: